Responsive Advertisement

Top News

কুমিল্লা মুরাদনগর এর ধর্ষণের ঘটনায় আওয়ামী লীগের লোক জড়িত সভাপতি

 কুমিল্লার মুরাদনগর এবং পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার দুইটা ঘটনা গতরাতে স্যোসাল মিডিয়ায় প্রচণ্ড আলোচনার জন্ম দেয়, সেই দুইটি ঘটনার প্রেক্ষিতে কয়েকটি কথা।


১.

প্রথমেই আসি কুমিল্লার মুরাদনগরের ঘটনায়। ঘটনাটা যতোটা সহজসরল ভাবে উপসংহার টেনে সবাই পোস্ট করছেন, আপাতত ঘটনাক্রম শুনে মনে হচ্ছে ব্যাপারটা এত সহজ না, বহুরকম প্যাঁচ আছে ঘটনায়।


ঘটনাটি ঘটেছিলো বৃহস্পতিবার, সেই ঘটনা নিয়ে চিল্লাপাল্লা শুরু হলো ঘটনার ২ দিন পর শনিবার রাতে। শুরুটা করেছে কালের কণ্ঠ, এরপর কয়েকজন ব্যক্তির স্যোসাল মিডিয়ার পোস্টের বরাত দিয়ে সেগুলো ব্যাপক পাবলিক এটেনশন পায় এবং মুহূর্তের মধ্যেই পুরো স্যোসাল মিডিয়া ওই ঘটনায় ভরে যায়।

<script async="async" data-cfasync="false" src="//pl27038600.profitableratecpm.com/d8994847545e28c26a1ccec77c46edad/invoke.js"></script>

<div id="container-d8994847545e28c26a1ccec77c46edad"></div>

ঘটনাকে বর্ণনা করা হয়েছিলো এমনভাবে— “ঘরের দরজা ভেঙে হিন্দু একজন নারীকে ধ র্ষ ণ করেছে এক বিএনপি নেতা"


ঘটনাক্রম যা বিভিন্ন জায়গা থেকে শুনলাম, সেখান থেকে আলোচনাটা কয়েকটা পয়েন্টে ভেঙে ভেঙে করছি।


ক.

পুরো এই ঘটনায় আইনগতভাবে সবচেয়ে বড় যেই ক্রিমিনাল অফেন্সটা হয়েছে, সেটা হলো ওই নারীর বিবস্ত্র অবস্থার ছবি ও ভিডিও ধারণ এবং ওই ভিডিও স্যোসাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়া। ( ঘটনার প্রেক্ষাপট কী ছিলো, রেইপ এর মত ঘটনা ঘটেছে, নাকি ঘটেনাই— সেই আলোচনা এখানে প্রাসঙ্গিক নয়। ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার মত ঘৃণ্য অপরাধের ভিক্টিম হলেন ওই নারী। এই অপরাধের জন্য অভিযুক্তদেরকে আইনানুযায়ী কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতেই হবে।


খ. 

এখন পর্যন্ত যা যা ঘটনাক্রম সামনে আসছে, তাতে করে সলিড রেইপ কেইসের ইস্যু হিসাবে এটাকে প্রমাণ করাটা খুবই দুরূহ হবে বলে মনে করি। তবে চূড়ান্ত কোন মতামত এখনই করতে চাই না। পরবর্তী আদালতের সিদ্ধান্তের ওপর ব্যাপারটা তোলা থাক।


বেশ কয়েকটা সোর্স থেকে জানা যাচ্ছে, এটা পরকীয়ার কেইস হতে পারে। প্রবাসী একজনের স্ত্রী হলেন ওই নারী, সেই প্রবাসী স্বামীর অনুপস্থিতিতে ওই নারীর সাথে পরকীয়ার সম্পর্ক ছিলো একজনের সাথে। পরবর্তী ওই সম্পর্কে থাকা পুরুষের আরেক ভাইয়ের সাথেও অন্যরকম একটা সম্পর্ক গড়ে উঠতে থাকে ওই নারীর। সেদিনকার এই ভিডিও রেকর্ডের সাথে ওই দুই ভাইয়ের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ইস্যুই মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে বলে ওইসব সোর্স থেকে মনে হওয়ার অবকাশ রয়েছে ( আমি চূড়ান্ত কোন মতামত দিচ্ছি না)। টাকা পয়সাও ধার করেছিলে ওই নারী রেইপের ঘটনায় অভিযুক্ত ভাইয়ের কাছ থেকে। বিভিন্ন সময়ে  টাকা ধারের ইস্যুটাকে কেন্দ্র করে বড়ভাই ওই নারীর ওপর আনডিউ ইনফ্লুয়েন্স খাটানোর চেষ্টা করেছে কি করে নাই— সেটাও হয়ত বিচার্য বিষয় হবে এই মামলায়, এখনও চূড়ান্ত মতামত দেওয়া উচিৎ হবে না।


বড়ভাইয়ের সাথে ওই নারীর অন্যরকম সম্পর্ক গড়ে উঠছে বেশ কিছুদিন যাবৎ, এই ব্যাপারটা নিয়ে তক্কে তক্কে থাকতো ছোটভাই, ব্যাপারটা হাতেনাতে ধরার জন্য।


যখনই বড়ভাইয়ের সাথে ওই নারী ওই ঘরে অবস্থান করার ঘটনা ঘটেছে, তখনই ছোটভাই ( আপন ছোটভাই নাকি কাজিন টাইপ, তা এখনও সুনিশ্চিত হওয়া যায় নাই) দলবলসহ ওই ঘরে ঢুকে দুইজনকে হাতেনাতে ধরে এবং প্রহার করতে থাকে নারী এবং পুরুষ উভয়কেই। একইসাথে নারীর বিবস্ত্র ছবি এবং ভিডিও ধারণ করে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। 


গ. ঘটনা নিয়ে যখন দুইদিন পর বিভিন্নভাবে আলোচনা শুরু হলো, তারপর পুলিশ এখন পর্যন্ত রেইপের ক্লেইমে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে (স্রেফ অভিযুক্তই বলছি, প্রমাণ হওয়ার আগ পর্যন্ত ওই পুরুষকে রেইপের অপরাধী বলার সুযোগ নাই) গ্রেফতার করেছে। ছোট ভাই ও তার সাঙ্গপাঙ্গ আরও তিনজন যারা ভিডিও ধারণ করেছিলো, তাদেরকেও এরেস্ট করেছে আজকে।


যাইহোক, প্রযুক্তি বহুদূর এগিয়েছে। বেশকিছু সায়েন্টিফিক টেস্ট আছে, সিআইডি যদি সেগুলো করানোর জন্য উদ্যোগী হয়, তাহলে মেডিকেলি এই প্রমাণ করা সম্ভব রেইপ হয়েছে কি হয় নাই। চূড়ান্ত খবর আসার আগ পর্যন্ত কোন কনক্লুশনে জাম্প করা উচিৎ হবে না। যদি রেইপ এর ইস্যু হয়, তাহলে কোন যদি কিন্তু ছাড়াই আসামীর সর্ব্বোচ্চ সাজা দাবি করি। শুধুমাত্র লোকদেখানো বিচার না, ফেয়ার ট্রায়ালের মাধ্যমে সর্ব্বোচ্চ সাজা তার পাওয়া উচিৎ। 


ঘ. এই ঘটনায় আরও দুইভাবে রংচং মাখিয়ে প্রচার চালানো হয়েছিলো।


প্রথমত 'হিন্দু নারী' প্রসঙ্গ টেনে এনে সংখ্যালঘুর ওপর সংখ্যাগুরুর (যদিও এসব গুরু-লঘুর কনসেপ্ট থাকা উচিৎ না, জাস্ট সৃষ্ট পার্সেপশান বোঝাতে উল্লেখ করা হলো) ক্ষমতার প্রভাবে একজনকে রেইপ করা হয়েছে, এই ন্যারেটিভ বিল্ড করা।


দ্বিতীয়ত, ওই পুরুষকে বিএনপির নেতা হিসাবে প্রচার চালিয়ে রাজনৈতিক রং লাগানো। অথচ অভিযুক্ত ব্যক্তি লিগের রাজনীতি করতো এবং ওই ছোটভাইও ছাত্রলীগের রাজনীতি করতো। মানে অযথাই বিএনপির নাম জড়ানো হয়েছে এই ইস্যুতে।


২.

 এবার আসি পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার কামাল গাজী (Kamal Gazi) নামক একজনের ফেইসবুক পোস্টের ব্যাপারে। একাধিক পোস্ট করেছিলো সে। একটা পোস্টে সে লিখেছিলো—


“আমার বাড়িতে গিয়ে আমার কলিজা(র) বউকে মেরে ফেলতে আছে বিএনপির লোকজন, দয়া করে আমার পরিবারকে বাঁচান।"


এর ঠিক পরেই একটা ভিডিও পোস্ট করে সে, সেখানে ক্যাপশন দেয়— “আমার বাড়িতে গিয়ে আমার কলিজা(র) বউকে এভাবে মাড়তে মাড়তে হাত পা বেঁধে নিয়ে গেছে একটু আগে। দেশবাসির সহযোগিতা কামনা করছি, আমার কলিজাটাকে বাঁচান।

স্থানঃ পটুয়াখালী জেলা, রাঙ্গাবালী উপজেলা, মৌডুবী ইউনিয়ন, ০৯ নং ওয়ার্ড। সময় রাত ১ টা।"


স্বভাবতই বিদ্যুৎগতিতে ওই পোস্টগুলো ভাইরাল হয়। কয়েক মিলিয়ন ভিউ হয় ওই ভিডিওর।


পরবর্তীতে পুরো এই ঘটনার খোঁজখবর নিয়ে দেখা গেলো কামাল গাজী হলো অত্র এলাকার পোস্টেড ছাত্রলীগ নেতা, যেই সংগঠন এখন নিষিদ্ধ ঘোষিত।  কিছুদিন আগে ওই মেয়েকে বিয়ে করে সে ( মেয়ের পরিবারে না জানিয়ে, মেয়েকে গোপনে নিয়ে এসে), বর্তমানে ছাত্রলীগের ওই ছেলেটা পলাতক আছে বেশকিছুদিন যাবৎ। মেয়ের বাড়ির লোকজন এরপর মেয়ের খোঁজ পেয়ে মেয়ের বাবা ও আত্মীয়রা মেয়েকে নিতে যেতে আসে এবং জোর করে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যেতে থাকে। 


মানে ঘটনার সামারি হলো পুরোপুরি পারিবারিক ইস্যু, ফ্যামিলি ক্রাইসিস। কিন্তু এই ফ্যামিলি ক্রাইসিসকে প্রচার চালানো হলো বিএনপির লোকজন কোন এক অচেনা নারীকে তার বাড়ি থেকে জোরপূর্বক ধরে নিয়ে যাচ্ছে এমন। কামাল গাজী আজ সকালে বিএনপিকে টার্গেট করে দেওয়া পোস্টগুলো ডিলিট করে দেয় ( তবে স্ক্রিনশটগুলো আছে সংরক্ষণে), শুধু ভিডিওর পোস্টটা এখনও রেখে দিয়েছে।


ওপরে বর্ণিত দুইটা ঘটনার প্রেক্ষিতে এখন যদি সামারি টানি, তাহলে বলতে হবে, খুবই বাজেভাবে পলিটিক্যালি টার্গেটেড প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হচ্ছে এই দুইটা ঘটনায়। এইধরনের সেনসেটিভ ঘটনায় যদি রংচং মাখিয়ে বাজে রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডা চালানো হয়, তাহলে দেখা যাবে যখন সত্যি ঘটনা ঘটে ( যেমন ধরুন, পলিটিক্যাল প্রভাবে বিএনপির বা অন্য কোন দলের কোন নেতা বা কর্মী সত্যিসত্যিই যখন এইটাইপের অপকর্ম করে বা করবে ) তখনও মানুষ সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখতে শুরু করে। এতে করে মূল ভিক্টিমরা বিচার পায় না বা পাবলিক সিম্প্যাথি পায় না। কিন্তু ফ্যাক্ট হলো রাজনৈতিক প্রভাবে বহু অপকর্ম প্রতিনিয়তই হচ্ছে। কিন্তু সত্য ওইসব ঘটনার পাশাপাশি একইসাথে সেনসেটিভ ইস্যুতে অপপ্রচার চলতে থাকলে, যখন রাজনৈতিক নেতাকর্মীর মাধ্যমে সাধারণ মানুষ সত্যিসত্যি ভিক্টিম হয়, তখন তাদের ন্যায়বিচার পাওয়ার পথ খর্ব হয়। রাজনৈতিক দল বা দলের লোকজন যখন প্রভাব খাটিয়ে অপকর্ম করে, তখন সেটা নিয়ে প্রতিবাদ জারি রাখতেই হবে সবাইকে, কিন্তু একইসাথে মিথ্যা প্রোপাগান্ডায় যেন গা ভাসিয়ে না দেওয়া হয়, সেটাও নজরে রাখতে হবে।


আর যেসব সংবাদমাধ্যম এভাবে টার্গেটেড ডিসইনফরমেশন ক্যাম্পেইন করছে, তাদের কাছে অফিসিয়ালি জবাবদিহিতা চাওয়া উচিৎ, তাদের এসব ইন্টেনশনাল কাজকর্মের মাধ্যমে খুবই স্পর্শকাতর ইস্যুতে মানুষের চিন্তাকে বাজেভাবে ডাইভার্ট করার মত নিকৃষ্ট কাজের জন্য।

Post a Comment

Previous Post Next Post