পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, বাংলাদেশের এমন সব যানবাহন আছে, যেগুলো থাকার কথা ছিল না। আপনারা জানেন আজ থেকেই মেয়াদোত্তীর্ণ ও ফিটনেসবিহীন গাড়িগুলো তুলে নেওয়ার জন্য বিআরটিএর অভিযান চলমান আছে। একটা জিনিস আমাদেরকে মাথায় রাখতে হবে, কোনো ব্যবসায়ীকে ক্ষতিগ্রস্ত করা আমাদের উদ্দেশ্য না। ফিটনেসবিহীন ও মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি সড়কে থাকলে যানজট তৈরি করে।
রোববার রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকায় এফডিসি কাউন্টার সংলগ্ন স্থানে এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। এদিন রাজধানীর হাতিরঝিল চক্রাকার বাস সার্ভিস ও মতিঝিল-শিববাড়ী রুটের বিআরটিসি বাসে এই সার্ভিসের উদ্বেধন করা হয়। এর ফলে স্মার্ট কার্ড সার্ভিসের মাধ্যমে একজন যাত্রী যে কোন যানবাহনে নগদ বা ভাংতি টাকার ঝামেলা ছাড়াই কার্ড ব্যবহার করে যাতায়াত করতে পারবেন।
,
তিনি বলেন, যেখানে সেখানে বাস থামানো বন্ধ করতে হবে। আমরা যদি যেখানে সেখানে বাস থামানো বন্ধ করতে পারি তবে বর্তমান ব্যবস্থাতেই অনেকটা গতি আসবে। আমাদের একটাই উদ্দেশ্য সড়কের গতি বৃদ্ধি করা। বাইরের দুনিয়াতে যেটা আগে থেকে ছিল সেটা আমরা এখন করতে চাই। টিকিটের জন্য যেন লম্বা লাইন ধরতে না হয় সেজন্য অ্যাপের মাধ্যমে টিকিটিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে।
অনুষ্ঠানে ডিটিসিএ নির্বাহী পরিচালক নীলিমা আখতার বলেন, র্যাপিড পাস কার্ডের মাধ্যমে সব গণপরিবহনের ভাড়া আদায়ের অংশ হিসেবে হাতিরঝিল চক্রাকার বাস সার্ভিসে (এইচ আর ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি) র্যাপিড পাস কার্ডের মাধ্যমে ভাড়া আদায় কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। এ কার্ডের মাধ্যমে মেট্রোরেলসহ সব গণপরিবহনে যাতায়াত করা যাবে। সরকার নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার সুযোগ নেই। নগদ ও ভাংতি টাকার ঝামেলা নেই।
তিনি বলেন, এ কার্ড হাতিরঝিল চক্রাকার বাসের সব কাউন্টারে পাওয়া যাবে। এছাড়া ডাচ বাংলা ব্যাংকের সব শাখা ও মেট্রোরেল স্টেশনগুলো থেকে এ কার্ড সংগ্রহ করা যাবে। এছাড়া একই অনুষ্ঠানে মতিঝিল থেকে গাজীপুরের শিববাড়ী পর্যন্ত বিআরটিসির ১০টি বাসে র্যাপিড পাস কার্ড চালু করা হয়।
ডিটিসিএর নির্বাহী পরিচালক জানান, এই উদ্যোগ নগরের গণপরিবহন ব্যবস্থাকে আরও স্মার্ট, নগদবিহীন, স্বচ্ছ এবং যাত্রীবান্ধব করে তুলবে। মেট্রোরেল লাইন-৬-এ র্যাপিড পাস ব্যবহারকারীর সংখ্যা ইতোমধ্যে গড়ে ৬৮ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। এছাড়া র্যাপিড পাসের মাধ্যমে ভাড়া আদায় এখন মেট্রোরেল ছাড়িয়ে বাস, নৌপথ এবং রেল পরিবহনেও বিস্তৃত হচ্ছে। হাতিরঝিল ওয়াটার ট্যাক্সি সার্ভিসে র্যাপিড পাসের পাইলট চালু হয়েছে। হাতিরঝিল ওয়াটার ট্যাক্সি পরিষেবায় পাইলট কার্যক্রম শুরু হয়েছে; অচিরেই যাত্রীরা র্যাপিড পাস ব্যবহার করে ভাড়া পরিশোধ করতে পারবেন।
বিআরটিসি বাস সার্ভিসেও র্যাপিড পাসের পাইলট কার্যক্রম চলছে; পর্যবেক্ষণের পর এটি নিয়মিতভাবে চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া সরকারি ও বেসরকারি বাস, নৌপথ, রেল এবং মেট্রোরেলসহ সব গণপরিবহন অপারেটরদের নির্ধারিত হার্ডওয়্যার সংগ্রহ করে ক্লিয়ারিং হাউসের মাধ্যমে সংযুক্ত হওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে। র্যাপিড পাস ব্যবহারকারীদের জন্য অনলাইন রিচার্জ সুবিধা শিগগিরই চালু করা হবে।
স্মার্ট কার্ড ব্যবহারের সুবিধা: যাত্রীদের দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়ানোর প্রয়োজন নেই; নগদ বা ভাংতির ঝামেলা ছাড়াই ভাড়া পরিশোধ; এক কার্ড দিয়ে মেট্রোরেল, বাস, নৌপথসহ একাধিক পরিবহন ব্যবস্থায় যাতায়াত; পূর্বনির্ধারিত ভাড়ার মাধ্যমে নির্বিঘ্নœ চলাচল; পরিবহন পরিচালনার ব্যয় হ্রাস এবং আর্থিক লেনদেনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা ও সরকারের রাজস্ব আদায়ে শতভাগ নিশ্চয়তা।
র্যাপিড পাস পাওয়া ও রিচার্জের স্থান: হাতিরঝিল চক্রাকার সার্ভিস কাউন্টারসমূহ; মেট্রোরেল স্টেশনসমূহ; ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ১৪২টি শাখা বা উপশাখা এবং শীঘ্রই ওয়েবসাইট ও মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে অনলাইন রিচার্জ সুবিধা পাওয়া যাবে।
ভবিষ্যতে আরও বিস্তৃতির পরিকল্পনা: স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে সরকারি বা বেসরকারি বাস, বিআইডব্লিউটিসি নৌযান, বাংলাদেশ রেলওয়ে, সড়ক ও সেতু বিভাগের টোল। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার রয়েছে ইউটিলিটি বিল, পার্কিং ফি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ফি ও উপবৃত্তি, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) সংযোগ, রিটেইল পেমেন্ট, বিস্তৃত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি), মেট্রোরেলের অন্যান্য লাইনে এই সুবিধা কার্যকর করা হবে।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী ও শেখ মইনউদ্দিন, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব এহসানুল হক, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী ও কেন্দ্রীয় শ্রমিক দলের প্রধান সমন্বয়ক শামছুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. সাইফুল আলম প্রমুখ।
Post a Comment