প্রবাসীর জমি দখল আওয়ামী লীগ নেতা



সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলায় প্রবাসীর জায়গা দখল করে আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে গরুর খাবার নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত মিলন খাঁন উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও বোগলাবাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। এ নিয়ে প্রশাসনের কাছে দৌড়ঝাঁপ করেও ভুক্তভোগী ফিরে পাচ্ছেন না জমি।



জানা যায়, দোয়ারাবাজার উপজেলার বোগলাবাজার ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মিলন খাঁনের পিতা আব্দুস শহীদ খাঁনের কাছ থেকে ২০০৪ সালে দলিলমূলে ১৮ শতক জমি ক্রয় করেন একই ইউনিয়নের বাগানবাড়ি নিবাসী মৃত আব্দুল মুনাফের ছেলে সৌদি প্রবাসী মো. আব্দুর রশিদ। জমির দখল বুঝে পাওয়ার পর দীর্ঘদিন বাউন্ডারি দিয়ে সংরক্ষণে রাখেন। ২০১৬ সালে ইউনিয়ন নির্বাচনে মিলন খাঁনের নৌকা প্রতীকে ভোট না দেয়ায় ক্ষেপে যান চেয়ারম্যান। বিজয়ী হয়ে রাতেই জায়গার চারদিকে দেয়া বাউন্ডারি জয় বাংলা শ্লোগান দিয়ে ভেঙে ফেলে দখলে নেন। এবং সেখানে গড়ে তুলেন চোরাই গরুর খামার। ক্ষমতার কারণে জমি দখলমুক্ত করতে পারেননি আব্দুর রশিদ।

গত বছরের ৫ আগস্টে পট পরিবর্তনের পর ভূমি ফেরত চাইতে আসলে আব্দুর রশিদ ও তার ছেলে পায়েলের উপর আসে প্রাণনাশের হুমকি। এসব বিষয় নিয়ে প্রশাসনে অভিযোগ ও মানববন্ধন করেও মিলছে না সমাধান।

স্থানীয় অনেকেই জানান, মিলন খাঁন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে হামলার অন্যতম আসামি । তিনি পালিয়ে থাকলেও এলাকায় তার ভয়ে কেউ মুখ খুলে না। পটপরিবর্তনের পর দেশে এভাবে অনেকে হারানো সম্পদ ফিরে পেলেও এখানে তার শক্তির কাছে অসহায় মানুষ।

ভুক্তভোগী আব্দুর রশিদের ছেলে পায়েল আহমদ জানান, মিলন খাঁন জোরপূর্বক বোগলাবাজারের মেইন রোডের পাশে প্রায় কোটি টাকার ১৮ শতক জমি দখল করে নিয়েছেন। এসব ঘটনার প্রতিবাদ করলেই মিথ্যা মামলা ও গুমের হুমকি দেন। প্রাণনাশের ভয়ে আছি।

স্থানীয় বাসিন্দা শাহজান মিয়া জানান, সৌদি প্রবাসী আব্দুর রশিদ ২০০৪ সালে মিলন খাঁনের পিতা শহীদ খাঁনের কাছ থেকে এই জমি ক্রয় করেন। কিন্তু ২০১৬ সালের ইউনিয়ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মিলন খাঁনকে সমর্থন না করায় বিএনপির সমর্থক আব্দুর রশিদের পরিবারের উপর ষড়যন্ত্র শুরু করেন। দলবল নিয়ে আব্দুর রশিদের ক্রয়কৃত ভূমির বাউন্ডারি ভেঙে দখল করে নেন। এরপর থেকে জায়গা তিনি ফেরত পাননি।

স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, ভূমির মালিকানা দাবি করায় চেয়ারম্যান মিলন খাঁন বিভিন্নভাবে ক্ষতি করেছেন আব্দুর রশিদের পরিবারকে। ২০১২ সালে আদালতে মামলা করেও কোনো ফল পাননি তারা। উল্টো মামলা তুলে নিতে প্রাণনাশের হুমকি দেয় চেয়ারম‍্যান পরিবার। পরে বাধ্য হয়ে মামলা তুলে নিতে হয়।

ভূমির মালিক আব্দুর রশিদ বলেন, আমি সৌদি বসবাস করি। সৌদি থাকা অবস্থায় ১৮ শতক জায়গা ক্রয় করি মিলন খাঁনের পিতা আব্দুস শহীদ খানের কাছ থেকে। জায়গার দখলও তারা বুঝিয়ে দেন। কয়েকবছর দখলেও ছিলাম। ২০১৬ সালে ইউনিয়ন নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে মিলন খাঁনকে ভোট না দেয়ায় জোর করে আমার জায়গাটি দখলে নেন।

চেয়ারম্যান মিলন খাঁনের পিতা আব্দুস শহীদ খাঁন বলেন, আমি আব্দুর রশিদের কাছে ৩ দাগে জমি বিক্রি করেছি। যে জমি আমাদের দখলে আছে সেটি আব্দুর রশিদের জমি নয়। তার জমি আমার ভোগ দখলীয় ভূমির পাশে পুকুরপাড়ে। কিন্তু সে সেই জমি নিতে রাজি নয়।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত চেয়ারম্যান মিলন খাঁন বলেন, জায়গা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আজ দুপক্ষের লোকজন বসবেন। আশা করি সমাধান হয়ে যাবে।

দোয়ারাবাজার থানার এসআই মোহন জানান, ভূমি সংক্রান্ত বিষয় আদালত দেখেন। ফৌজদারি অপরাধ সংঘটিত বিষয় থানা দেখেন। তবুও সামাজিকভাবে বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য আমি চেষ্টা করছি। আশা করি বিষয়টি সমাধান হয়ে যাবে।