শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল, চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন

রাজাকার এবং রাজাকারের বাচ্চা বলে তাদেরকে নির্মূল করার জন্য যে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছিলেন তারই

ধারবাহিকতায় গোটা বাংলাধেশ জুড়ে নিরীহ নিরস্ত্র ছাত্রজনতার উপর যে আক্রমণ শুরু হয় তাতে প্রায় দেড় হাজার ছাত্র-জনতাকে হত্যা করা হয়, প্রায় ২৫ হাজার ছাত্র-জনতাকে আহত করা হয়। অনেকে অন্ধত্ব বরণ করেছেন, অনেকে অঙ্গহানির শিকার হয়েছেন।তার উসকানিমূলক বক্তব্যের প্রেক্ষিতে সারাদেশ ব্যাপী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং আইজিপি চৌধুরী আল মামুনের নেতৃত্বে আক্রমণ পরিচালনা করা হয়। সেই অভিযোগে প্রথম অভিযোগটি গঠন করা হয়।

অভিযোগ-২: গণভবন থেকে শেখ হাসিনা ১৪ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তদানীন্তন উপাচার্য মাকসুদ কামালের সাথে কথোপকথন এবং ১৮ তারিখে তার ভাতিজা শেখ ফজলে নূর তাপসের সাথে আরেকটি টেলিফোন করভারসেশনে তিনি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন, তিনি আইনশৃঙ্খলাবাহিনী এবং সংশ্লিষ্ট বাহিনীগুলোকে সুস্পষ্টভাবে নির্দেশ দিয়েছেন, আন্দোলনরত ছাত্র-জনতাকে হত্যা করার জন্য। মারণাস্ত্র ব্যবহার করে তাদের হত্যা বা নির্মূল করার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন হেলিকপ্টর এবং ড্রোন ব্যবহার করে দেখামাত্র গুলি করে হত্যা করার জন্য। সেই নির্দেশের কথা তিনি দুটি টেলিফোন কনভারসেশনে উল্লেখ করেছেন। আদেরকে আশ্বস্ত করেছেন, আমি নির্দেশ দিয়েছি, সুতরাং এ বিক্ষোভ দমন হয়ে যাবে, নির্মূল হয়ে যাবে। তার এ আদেশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের মাধ্যমে সমস্ত বাহিনীগুলোর কাছে পাঠানো হয়েছে, আওয়ামী লীগের কাছে কনভে করা হয়েছে, ছাত্রলীগ-যুালীগের কাছে কনভে করা হয়েছে।এবং সেই নির্দেশের আলোকে দেশব্যাপী দেড় হাজার ছাত্র-জনতাকে হত্যা করা হয়েছে। ২৫ হাজার মানুষকে আহত করা হয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডের দায়ে তাদের বিরুদ্ধে সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবিলিটির আওতায় অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।




অভিযোগ-৩: ১৬ জুলাই রংপুরে নিরস্ত্র আবু সাঈদকে পুলিশ পরপর অনেকগুলো গুলি করে হত্যা করে। এটি হয়েছিল শেখ হাসিনার নির্দেশের প্রেক্ষিতে এবং এ নির্দেশটি প্রকাশ হয়েছিল তার টেলিফোন কনভারসেশন থেকে। ১৪ জুলাই সংবাদ সম্মেলনে তিনি যে বলেছিলেন ‘রাজাকারের বাচ্চা’, তারই ধারাবাহিকতায় রংপুরে আবু সাইদকে হত্যা করা হয়। হত্যা করার পরে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় রংপুর মেডিকেল কলেজে। সেখানে হত্যার প্রকৃত কারণ গোপন করার জন্য পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট চারবার পরিবর্তন করা হয়। এ হত্যা, হত্যাচেষ্টা, ষড়যন্ত্র, নির্দেশ এর মাধ্যমে এই আসামিরা তাদের সুপিরিয়র স্ট্যাটাস ব্যবহার করে রংপুরের পুলিশ প্রশাসন এবং অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এবং আওয়ামী লীগ, যুবলীগ এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ব্যবহার করে সেখানে আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা করে যে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন সে দায়ে তৃতীয় অভিযোগটি গঠন করা হয়েছে।
অভিযোগ ৪: অগাস্টের ৫ তারিখ যখন সারা বাংলাদেশ থেকে ছাত্র-জনতাকে ঢাকা আসার আহ্বান জানানো হয়েছিল, সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে যখন ছাত্র জনতা আসছিল সে সময় রাজধানীর চানখার পুল এলাকায় বেলা ১০টা থেকে আড়াইটার মধ্যে এ তিন আসামির নির্দেশে ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনারের মাধ্যমে ও অন্যান্য পুলিশ ছয়জনকে গুলি করে হত্যা করে। তার মধ্যে শহীদ শহরিয়ার খান আনাজ, জুনাইদসহ আরও চারজন রয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবিলিটি এবং তাদের অধীনস্তদের মাধ্যমে হত্যাকাণ্ড ঘটানোর দায়ে চতুর্থ অভিযোগ গঠন করা হয়।
অভিযোগ-৫: তাদের নির্দেশে সাভারের এমপিসহ অধীনস্তদের সাহায্যে সাভারের আশুলিয়া থানার সামনে ৫ অগাস্ট বিকালবেলা লেথাল উইপন ব্যবহার করে ছয়জনকে হত্যা ও লাশ পুড়িয়ে ফেলার অভিযোগ গঠন করা হয়। একটি গলির মধ্যে ঠান্ডা মাথায় সাব মেশিনগান এবং চায়নিজ রাইফেল দিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়।ওই ছয় জনকে একটি পুলিশ ভ্যানে তুলে পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পোড়ানোর সময় একজন নড়াচড়া করছিল, তাকে উদ্ধার না করে পুড়িয়ে ফেলা হয়।

প্রেক্ষাপট

একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। ২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এই ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনা এবং তার সহযোগীদের বিচারের উদ্যোগ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার।

অভিযোগ দাখিলের পর প্রসিকিউশনের আবেদনে গত ১৭ অক্টোবর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। দেশ ছাড়ার পর থেকেই ভারতে অবস্থান করছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।

জুলাই-অগাস্টের দমন-পীড়নে ভূমিকার জন্য দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচারের জন্যও ইতোমধ্যে আইন সংশোধন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।

জামায়াতে ইসলামী, এনসিপিসহ কয়েকটি দল নির্বাচনের আগেই শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের বিচার শেষ করার দাবি জানিয়ে আসছে।

আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল সম্প্রতি এক ফেইসবুক পোস্টে বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের শাসনামলেই এ বিচার শেষ হবে বলে তিনি আশা করছেন।