জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে শক্তিশালী করতে নতুন অধ্যাদেশ অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ নিজস্ব প্রতিবেদক

 

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে শক্তিশালী করতে নতুন অধ্যাদেশ অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ | আমার দেশ নিউজ

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে শক্তিশালী করতে নতুন অধ্যাদেশ অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে আরও শক্তিশালী ও কার্যকর করার লক্ষ্যে নতুন ‘জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অধ্যাদেশ’ অনুমোদন করেছে সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। বৃহস্পতিবার রাজধানীর সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের নিয়মিত বৈঠকে এই অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা।

অধ্যাদেশের উদ্দেশ্য ও সরাসরি প্রভাব

নতুন অধ্যাদেশের মাধ্যমে কমিশনের স্বাধীনতা, ক্ষমতা ও দায়িত্ব আরও সুসংহত করা হবে বলে সরকারি সূত্রে জানা গেছে। এর ফলে মানবাধিকার সুরক্ষায় কমিশনের ভূমিকা আরও কার্যকর, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক হবে বলে আশা করা হচ্ছে। অধ্যাদেশটির মূল লক্ষ্য হলো জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে প্রশাসনিক ও আর্থিকভাবে স্বাধীন করা, যাতে এর কার্যক্রম রাজনৈতিক প্রভাবমুক্তভাবে পরিচালিত হতে পারে।

প্রধান সংশোধনী ও বৈশিষ্ট্যসমূহ

  • কমিশনকে স্বপ্রণোদিতভাবে তদন্ত করার ক্ষমতা প্রদান,
  • সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার কাছ থেকে তথ্য আহরণ করার অধিকার,
  • মানবাধিকার বিষয়ক জনসচেতনতা, গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা,
  • কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন না হলে সরকারের কাছে ব্যাখ্যা দাবি করার বিধান,
  • সুপারিশ বাস্তবায়নের অগ্রগতির বিষয়ক ছয় মাস অন্তর প্রতিবেদন প্রকাশের বাধ্যবাধকতা।

বিশেষজ্ঞ ও নাগরিক সমাজের প্রতিক্রিয়া

মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ ও নাগরিক সমাজ নতুন অধ্যাদেশকে ইতিবাচক উদ্যোগ হিসেবে দেখছেন। বাংলাদেশ মানবাধিকার ফোরামের নির্বাহী পরিচালক ড. রাশেদা হক বলেন, “দীর্ঘ সময় ধরে কমিশন যথেষ্ট ক্ষমতা ও আর্থিক স্বাধীনতার অভাবে সীমিতভাবে কাজ করেছে। নতুন অধ্যাদেশ সেই সীমাবদ্ধতা কাটাতে সহায়ক হবে।”

আইনজীবী ব্যারিস্টার আরিফ হোসেন বলেন, “কমিশনের কার্যকারিতা নির্ভর করবে এর সদস্যদের পেশাদারিত্ব ও স্বাধীনতার ওপর। বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।”

কমিশনের অতীত সীমাবদ্ধতা ও প্রেক্ষাপট

২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত কমিশন মানবাধিকার সুরক্ষায় ভূমিকা রাখলেও বিচারবহির্ভূত হত্যা, নিখোঁজ, নারী ও শিশু নির্যাতনের মতো ঘটনার ক্ষেত্রে সীমিত প্রভাব রাখে। নতুন অধ্যাদেশ সেই সীমাবদ্ধতা কাটাতে এবং জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধারে ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সরকারের প্রত্যাশা ও ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা

সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই অধ্যাদেশের ফলে কমিশনের ওপর জনগণের আস্থা বাড়বে এবং মানবাধিকার সুরক্ষায় প্রশাসনিক সহযোগিতা আরও দৃঢ় হবে। প্রধান উপদেষ্টা বৈঠকে বলেন, “মানবাধিকার রক্ষা কেবল আইনি নয়, এটি নৈতিক দায়িত্ব। নতুন অধ্যাদেশ সেই দায়িত্ব পালনে কমিশনকে আরও শক্তিশালী করবে।”

চ্যালেঞ্জ ও বাস্তবায়ন

বিশেষজ্ঞদের মতে, অধ্যাদেশের সফলতা নির্ভর করবে বাস্তবায়ন ও রাজনৈতিক সদিচ্ছার ওপর। কমিশনের স্বাধীন তদন্ত কার্যক্রম, পর্যাপ্ত বাজেট ও প্রশাসনিক সহযোগিতা নিশ্চিত না হলে কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া কঠিন হবে।

উপসংহার

নতুন জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অধ্যাদেশ দেশের মানবাধিকার অগ্রযাত্রায় একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। তবে কেবল আইন প্রণয়ন নয়, বাস্তব প্রয়োগই নির্ধারণ করবে কমিশনের প্রকৃত কার্যকারিতা। জনগণের আস্থা ও ন্যায়বিচার প

0 Comments