![]()  | 
| মোঃ রাসেল হোসাইন প্রবাস থেকে | 
বাংলাদেশ — একটি ছোট ভূখণ্ডের মাঝে অবস্থিত দক্ষিণ এশিয়ার উদীয়মান একটি দেশ, যার জন্ম হয়েছে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালে। স্বাধীনতার মাত্র কয়েক দশকের মধ্যেই বাংলাদেশ আর্থ-সামাজিক, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রযুক্তি ও অবকাঠামোগত দিক থেকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। তবে, এ অগ্রগতির পাশাপাশি রয়েছে নানা চ্যালেঞ্জ ও সংকট, যা আমাদের ভবিষ্যৎ পথচলাকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিচ্ছে।
বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে আলোচিত বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো রাজনৈতিক অস্থিরতা। নির্বাচন সামনে আসলেই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে উত্তেজনা, বিভাজন এবং সংঘাত বেড়ে যায়। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ থাকা অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, এখানে প্রায়ই বিরোধী দলগুলো নির্বাচনী ব্যবস্থার প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করে। এতে জনগণের আস্থার সংকট তৈরি হয় এবং বিদেশি কূটনীতিকদের দৃষ্টি আমাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির দিকে চলে আসে।
অর্থনীতির দিক দিয়ে বাংলাদেশ কিছু বছর আগেও ছিল দক্ষিণ এশিয়ার রোল মডেল। তৈরি পোশাকশিল্প, প্রবাসীদের রেমিটেন্স, কৃষিভিত্তিক উৎপাদন ও ক্ষুদ্র শিল্প খাত বাংলাদেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়েছিল। তবে সাম্প্রতিক বৈশ্বিক মন্দা, করোনা মহামারির প্রভাব এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আমদানি খরচ বেড়ে গেছে, ডলারের সংকট দেখা দিয়েছে, এবং অনেকক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতি সাধারণ মানুষের জীবনকে কষ্টকর করে তুলেছে। বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে, যা মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষদের জীবনযাত্রায় সরাসরি প্রভাব ফেলেছে।
শিক্ষা খাতেও একধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। করোনাকালীন দীর্ঘসময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় একটি প্রজন্মের মধ্যে শিক্ষাগত দূরত্ব তৈরি হয়েছে। যদিও এখন ডিজিটাল শিক্ষা ব্যবস্থার দিকে ঝোঁক রয়েছে, কিন্তু দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এখনও প্রযুক্তিগত অবকাঠামো ও দক্ষতার ঘাটতি রয়েছে। শিক্ষক সংকট, দুর্বল পাঠদান এবং পরীক্ষা নির্ভর শিক্ষাব্যবস্থাও নতুন প্রজন্মের মানসিক বিকাশে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
বাংলাদেশের আরেকটি উল্লেখযোগ্য সমস্যা হলো দুর্নীতি। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ঘুষ, স্বজনপ্রীতি ও প্রশাসনিক দুর্বলতা দেশের সামগ্রিক উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করছে। দুর্নীতির কারণে প্রকল্পগুলোর বাজেট অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং জনগণের করের টাকার অপব্যবহার হচ্ছে। যদিও সরকার “দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স” নীতি গ্রহণ করেছে, কিন্তু বাস্তবচিত্রে এখনও সেই প্রতিফলন দেখা যায় না।
সামাজিক পরিস্থিতির দিক দিয়েও বাংলাদেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখে। মাদক, নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, বেকারত্ব, এবং কিশোর গ্যাং কালচারের মতো বিষয়গুলো তরুণ প্রজন্মের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এসব মোকাবেলায় কাজ করছে, তবে সামাজিক সচেতনতা এবং পারিবারিক বন্ধন দুর্বল হয়ে পড়ায় সমস্যা আরও জটিল হচ্ছে।
তবে এসব সমস্যা থাকা সত্ত্বেও আশার আলোও রয়েছে। বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি শিক্ষিত, প্রযুক্তিবান্ধব ও উদ্যোক্তা মানসিকতার অধিকারী। ফ্রিল্যান্সিং, স্টার্টআপ, অনলাইন ব্যবসা, ই-কমার্স, এগ্রো-টেক ইত্যাদি ক্ষেত্রে হাজারো তরুণ নিজেদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করছে। নারী শিক্ষার হার বেড়েছে, নারীরা এখন কর্মক্ষেত্রে, রাজনীতিতে, প্রশাসনে এবং প্রযুক্তিতে নেতৃত্ব দিচ্ছে। এছাড়া পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, কর্ণফুলী টানেলসহ বড় বড় অবকাঠামো উন্নয়ন বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রতিচ্ছবি।
সবশেষে বলা যায়, বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি যেমন চ্যালেঞ্জে পরিপূর্ণ, তেমনি সম্ভাবনায় ভরপুর। সঠিক নেতৃত্ব, দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, এবং প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষার মাধ্যমে বাংলাদেশ একটি উন্নত ও মর্যাদাসম্পন্ন রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারে। দেশের প্রতিটি নাগরিক যদি নিজের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করে, তাহলে "সোনার বাংলা" গড়ার স্বপ্ন শুধু কল্পনা নয়, বাস্তবতা হবে।
এমন টাই রেখেছেন।
     লেখেছেন
মোঃ রাসেল হোসাইন 
০৭-০৮-২০২৫ 
Amar Desh আমার দেশ নিউজ 
বিষয়: বাংলাদেশ ও বর্তমান পরিস্থিতি


0 Comments
Post a Comment