I am writing about the Bangladesh Armed Forces after a long time. At the beginning of writing, an assessment of the current situation in the country is necessary. Today, Bangladesh stands at a crossroads.

অনেক দিন পর বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী নিয়ে লিখছি। লেখার শুরুতেই দেশের বর্তমান পরিস্থিতির একটি মূল্যায়ন প্রয়োজন। আজ বাংলাদেশ এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। জুলাই বিপ্লব-পরবর্তী হতাশা, সীমিত জ্ঞান ও সীমাহীন ইন্টারনেটের অপপ্রয়োগ (ডানিং-ক্রুগার এফেক্ট, অনেকের ভাষায় 'ডার্বি নাসির সিনড্রোম'), এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা—এসবের জটিল মিশ্রণে আমরা এক সংকটময় পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে আছি। 


আওয়ামী লীগের স্বৈরতন্ত্র ভেঙে পড়লেও এখনো কার্যকর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পায়নি। মানুষের প্রতি মানুষের আস্থা কমে গেছে, সরকারী প্রতিষ্ঠান এ সরকারের প্রতি জনসাধারণের আস্থাও কমেছে। চিহ্নিত কিছু ব্যক্তি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যা অভিযোগ তুলে অন্যকে হেয় প্রতিপন্ন করা যেন এক নতুন শিল্পে পরিণত করেছে। দেশ ও জনগণের শেষ আশ্রয়স্থল বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌ এবং বিমানবাহিনীও প্রতিনিয়ত এসবের শিকার হচ্ছে, এই সকল বাহিনী ও সততা-নিষ্ঠার সাথে কর্মরত বিভিন্ন কর্মকর্তাকে কেন্দ্র করে বিভ্রান্তি, অপপ্রচার ও কুৎসা ছড়ানো এক ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।


১ আগস্ট ২০২৪ থেকে সেনাবাহিনীর অধিকাংশ কর্মকর্তা সাধারণ মানুষের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছিলেন এবং দেশকে স্বৈরতন্ত্র ও একনায়কতন্ত্র থেকে মুক্ত করতে সহায়তা করেছিলেন। কিন্তু আক্ষেপের বিষয় হলো আজ এই বাহিনীর দেশপ্রেমিক কর্মকর্তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাজেভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা হচ্ছে। রাষ্ট্রের জন্য এটি কোনোভাবেই কল্যাণকর নয়। আগামী পাঁচ বছর পর হয়তো ডার্বি নাসির বা ল্যাংটা সুলেমান এরা কেউই প্রাসঙ্গিক থাকবে না, কিন্তু বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী থাকবে—এটাই সত্য।


আজ দেশে বিপ্লবের নামে বহু “মাস্টারমাইন্ড” দেখা গেলেও প্রশ্ন হলো—কোথাও কি দেখা গেছে সেনা/নৌ/বিমান বাহিনীর কোনো সদস্য ব্যক্তিগত স্বার্থে কোন প্রতিদান চেয়েছেন? দেশের বিভিন্ন সেনানিবাসে কর্মরত শতশত কর্মকর্তা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জুলাই-আগস্ট ২০২৪ এর সকল অভ্যন্তরীণ আপডেট দিয়েছিলেন, তাঁরা কি কখনো সেসব সবাইকে বলে বেড়িয়েছেন? বা ক্রেডিট দাবি করেছেন? যেই অফিসাররা গুম-খুনের বিপক্ষে তাদের নিজের এবং তাদের পরিবার এর জীবন সংকটাপন্ন করে নিরলসভাবে ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন, এমনকি দেশত্যাগ এ বাধ্য হয়েছিলেন কয়েকজন তারা কিন্তু প্রতিদান দাবি করেননি। আজ আয়নাঘর প্রতিবেদন নিয়ে বহুজন হরেকরকম গালগল্প দেন। কাদের কারণে আমরা জানতে পেরেছিলাম এই অন্ধকার সাইটের বিস্তারিত? ব‍্যরিস্টার আরমান, ব্রিগেডিয়ার আজমি, মাইকেল চাকমা যে জীবিত ছিলেন, এবং তাঁদের অবস্থান আমাদের কারা জানাতো? এছাড়াও কতশতভাবে যে স্বৈরাচারের ভীত কাঁপাতে সামরিক বাহিনীতে চাকরীরত কর্মকর্তা ও সাধারণ পদবীর সদস্যরা সহায়তা করেছেন সেসব হয়তো কখনো প্রকাশ হবে। 


কিন্তু আজ তাঁদের অবদান ভুলে গিয়ে সশস্ত্র বাহিনীর ইউনিফর্মকে অপমান করা হচ্ছে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে যেমন ভালো-মন্দ উভয়ই থাকে, তেমনি এসকল বাহিনীতেও আছে। কিন্তু যে প্রতিষ্ঠান জুলাই অগাস্ট মুক্তি সংগ্রামে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে, সেটিকে অপমান করে সমাজ কতটা আনন্দ পায়—তা সত্যিই বিস্ময়কর।


সেনাবাহিনীতে অনেক কর্মকর্তা আছেন যাদের পেশাদারিত্ব ও নৈতিকতা অনন্য উচ্চতায়। তারা কোনোদিন অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেননি, কোনো ফরমায়েশি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেননি। ৪/৫আগস্টের সংকটকালে দুইজন সাহসী মেজর জেনারেল এবং ২/৩ জন চৌকস ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাহসিকতার সাথে নিজ জীবন বিপন্ন করে, লেঃ জেনারেল মুজিব ও জিয়াউল আহসান এর সেনা অভ্যুত্থানের চেষ্টা প্রতিহত করেছিলেন। খুনি জিয়াউল আহসানকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর, স্বৈরাচার সরকারের দোসর আনিসুল হক ও সালমান এফ রহমানকে গোয়েন্দা তৎপরতায় গ্রেফতারে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। 


একজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল, ০৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে সেনাবাহিনীর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানকে রূপান্তর করছেন বাহিনীর সকলের আস্থার প্রতীক হিসাবে। ওই প্রতিষ্ঠান এর প্রধান হিসাবে উক্ত অফিসার তার নিজের প্রশ্নাতীত পেশাদারিত্ব দিয়ে নিরলসভাবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে রয়ে যাওয়া ফ্যাসিবাদী প্রভাবক ও দালালদের বিরুদ্ধে নীরবে কাজ করেছে, যা বাহিনীর ভেতরে স্থিতিশীলতার ছায়া ফেলেছে। কিন্তু কিছু ফ্যাসিবাদী অফিসারদের ইন্ধনে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে উক্ত দেশপ্রেমিক অফিসারের ব্যাপারে চরমভাবে মিথ্যাচার করে হচ্ছে, যা সত্যের অপলাপ অবং সেনাবাহিনীকে অপেশাদার বানানোর একটা অপচেষ্টা। হাসিনা পালিয়ে না গেলে উপরে উল্লিখিত অন্তত চার অফিসারের জেল না বরং ফাঁসি নিশ্চিত ছিল। এজন্য তারা অভিনন্দনের দাবিদার। উপরন্তু, ২৭ জুলাই ২০২৪, যেই ব্রিগেডিয়ার সকল জেষ্ঠ অফিসার এর মাঝে দাড়িয়ে জনসাধারণের দিকে গুলি করার প্রতক্ষ্য বিরোধিতা করেছিলেন, ওই অফিসারকেও সাম্প্রতিক সময়ে দেখলাম ”র” এর এজেন্ট বানিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাংলদেশে বর্তমান যে পরিমাণ “র” (RAW) এর এজেন্ট আপনারা বানিয়েছেন, আমি নিশ্চিত ইন্ডিয়া তে বসে “র” (RAW) এর প্রধান নিজেও জানেন না আসলেই এত পরিমাণ “র” (RAW) এর এজেন্ট তাঁর নিজেরও আছে কিনা! 


আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে। জয় বাংলাদেশের সামাজিক মাধ্যম, জয় মিথ্যাচার। বাংলাদেশী অফিসার ইন্ডিয়া তে কোর্স করলে যদি "র" এর এজেন্ট হয়ে যায় তাহলে প্রতিবছর বাংলদেশ এ অনুমানিক ১৫০ অফিসার বিভিন্ন দেশ থেকে কোর্স করতে আসে তারা কি সবাই ডিজিএফআই এর এজেন্ট???? কি ভয়াবহ রকমের ক্লেইম। 


অনেকে প্রশ্ন করেন—সেনাবাহিনী মাঠে থাকা সত্ত্বেও সন্ত্রাস কমছে না কেন। এটা বিবেচনায় নেয়া গুরুত্বপূর্ণ যে সেনা সদস্যদেরও সীমাবদ্ধতা আছে। তারা কেবল জীবন হুমকির মুখে পড়লেই অস্ত্র ব্যবহার করেন। আর সম্ভবত এ কারণেই বিশেষ গোষ্ঠির 'সেনা ভীতি' কিছুটা কমে গেছে। আর এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সামাজিক মাধ্যমে অযাচিত ট্যাগিং, যা বাহিনীর সদস্যদের মনোবল ভেঙে দিচ্ছে। কিছুদিন আগে ছিনতাইকারী সামুরাই সোর্ড দিয়ে আঘাত করে একজন সেনা সদস্যকে মারাত্মক আহত করা হয়। পরে যখন সেই সামুরাইয়ের মূল কারখানা ধরা পড়ল নিউমার্কেট, তখন সবার মনে কত প্রশ্ন জাগলো! 


আপনারা প্রত্যক্ষ করেছেন—সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদকে গ্রেফতার করার পর, সেই অভিযানে অংশগ্রহণকারী সেনা সদস্যরা কী ভয়াবহ সামাজিক হয়রানির শিকার হয়েছেন।রামুতে লেফটেন্যান্ট তানজিম সন্ত্রাসী ধরতে গিয়ে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন। তারপরও একটি চিহ্নিত গোষ্ঠী অনলাইন ট্রল করেছে। আপনারা কি কখনো পরিসংখ্যান করে দেখেছেন—আগস্টের পর সেনাবাহিনী কতজন সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করেছে এবং কি বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার করেছে। অথচ আমরা না জেনে, না বুঝে, যে যেভাবে পারি, সেই বাহিনীর মনোবল ভাঙছি। সত্যিই এটি লজ্জাজনক।


সবচেয়ে বেদনাদায়ক হলো—সেনা কর্মকর্তাদের নিয়ে ইচ্ছাকৃত মিথ্যাচার। কিছু সত্য ঘটনা বেরিয়ে এলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যা। অনেক সময় কর্মকর্তাদের পরিবারের বহু পুরনো রাজনৈতিক অতীত ঘেঁটে সামাজিকভাবে হেয় করার চেষ্টা করা হয়। এতে সত্য ও মিথ্যার পার্থক্য মুছে যাচ্ছে। সেনাবাহিনী থেকে যদি এখনও রাজনৈতিক বিভক্তি না দূর করা যায় তাহলে সামনে অমানিশার অন্ধকার ছাড়া কোন আলো আমি দেখতে পাচ্ছি না ।


অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তারা বা যাদের বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেপ্রনোদিত কারণে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে, তাঁদের বিষয়ে সশস্ত্র বাহিনীর কিছুটা নমনীয় হওয়া প্রয়োজন। যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিংবা প্রকাশ্যে জুলাই বিপ্লবকে সমর্থন করেছেন, তাদের সম্মান ও প্রাপ্য সুযোগ প্রদান দেওয়া উচিত। রাজনৈতিক কারণে সেনানিবাসে অবাঞ্ছিত অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা, বিতর্কিত অভিবাসন নীতির কারণে চাকরি ছাড়তে বাধ্য হওয়া কর্মকর্তাদের পেনশন সুবিধা/ ক্ষতিপূরণ দেওয়া, এবং অন্যায়ভাবে নিপীড়িত কর্মকর্তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা—এসব পদক্ষেপ বাহিনীর ঐক্যকে আরও মজবুত করবে। তবে অবশ্যই গুম বা খুনের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা অব্যাহত রাখতে হবে। এছাড়াও, বেশ কিছু চাকুরীরত সেনা কর্মকর্তা রাজনৈতিক কারণে বা আওয়ামী ক্ষমতাসীন জেনারেলদের বাক্তিগত ক্ষোভ এর স্বীকার হয়ে অন্যায় কিংবা উদ্দেশ্যমূলক শাস্তির সম্মুখীন হয়েছেন। তাঁদের শাস্তি পুনর্বিবেচনা করা উচিত। উপরক্ত বিষয়গুলো বাহিনীর ভেতরেই বোর্ড গঠন করে নিয়মতান্ত্রিক উপায় এ সমাধান করা প্রয়োজন, কারণ এখানে আর্থিক সংশ্লেষ তেমন বেশি নেই।


পরিশেষে বলব—সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রাপ্ত প্রতিটি তথ্য যাচাই-বাছাই করে গ্রহণ করা উচিত। ভ্রান্ত প্রচারণা ও মিথ্যাচারের মাধ্যমে দেশের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠানকে দুর্বল করা কোনোভাবেই কাম্য নয়। সূর্য পূর্বদিকে ওঠে—এ তথ্য যেমন চিরন্তন সত্য, তেমনি বাংলাদেশের জনগণ যে কোনো কঠিন সংকটে সেনাবাহিনীর কাছেই আশ্রয় খুঁজবে—এটিও অনস্বীকার্য সত্য।