দেশকে বাঁচাতে হলে জাতীয় ঐক্য ধরে রাখা ছাড়া বিকল্প নেই: প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস
ঢাকা: ফ্যাসিবাদকে পরাস্ত করতে হলে এবং দেশকে বাঁচাতে হলে জাতীয় ঐক্য ধরে রাখা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুস।
শনিবার (১ নভেম্বর) জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ায় কমিশন সদস্যদের অভিনন্দন জানিয়ে দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি এ মন্তব্য করেন।
“আমাদের সবার মনে রাখতে হবে—যে অভূতপূর্ব ঐক্য আজ আমাদের মধ্যে রয়েছে, রাষ্ট্র সংস্কারে এই জাতীয় ঐক্য আমাদের ধরে রাখতেই হবে। কারণ, ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠী এ জাতিকে বিভক্ত করতে সর্বশক্তি নিয়োজিত করেছে। গত ১৫ মাস আমরা তাদের নানা ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করেছি। ফ্যাসিবাদকে পরাস্ত করতে হলে, এই দেশকে বাঁচাতে হলে জাতীয় ঐক্য ধরে রাখা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।”
🏛️ জুলাই জাতীয় সনদ: ঐতিহাসিক অর্জন
জুলাই জাতীয় সনদ প্রসঙ্গে ড. ইউনুস বলেন,
“জুলাই জাতীয় সনদ আমাদের ঐতিহাসিক অর্জন। এটি কেবল আমাদের আগামী জাতীয় নির্বাচনের পথকে সুগমই করবে না, বরং জাতীয় রাজনীতির ভবিষ্যৎ পথনির্দেশক হিসেবে কাজ করবে এবং আমাদের গণতন্ত্রকে সুসংহত করবে।”
তিনি আরও বলেন, জনগণ এখন প্রত্যাশা করছে জাতীয় জীবনে এমন কিছু পরিবর্তন দেখতে, যা গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির বিকাশ ঘটাবে, স্বৈরাচারী রাজনীতির পুনরাবৃত্তি রোধ করবে এবং সবার নাগরিক অধিকার ও মর্যাদা রক্ষা করবে।
“সবচেয়ে আশার কথা হলো—আমরা নিজেরাই এই সংস্কার প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ করেছি, একমত হয়েছি। বাইরের কেউ আমাদের ওপর কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়নি।”
🤝 বাংলাদেশের রাজনৈতিক ঐকমত্যে নতুন দৃষ্টান্ত
“আগে বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংলাপে বিদেশিদের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে দেখা গেছে। কিন্তু জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে—আমাদের নিজেদের সংকট নিজেদেরই সমাধান করতে হবে। সেই কারণেই আমরা সবাই এক কাতারে এসে ঐকমত্যে পৌঁছেছি। বিশ্ববাসীর কাছে আমন্ত্রণ না জানিয়ে বরং আমরা তাদের সামনে আমাদের জাতীয় ঐক্যকে তুলে ধরেছি।”
তিনি সব রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন,
“যারা অক্লান্ত পরিশ্রমে জুলাই সনদ প্রণয়নে ভূমিকা রেখেছেন, অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন—আমি জাতির পক্ষ থেকে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।”
এছাড়া তিনি যোগ করেন,
“জুলাই সনদ সারাবিশ্বের জন্যই একটি অনন্য দৃষ্টান্ত। পৃথিবীর অন্য কোথাও এমন ঘটনা ঘটেনি। এটি বিশ্ব রাজনৈতিক ইতিহাসে এক উজ্জ্বল অধ্যায় হয়ে থাকবে।”
🔰 চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ঐক্যের আহ্বান
“দেশের সামনে মহা চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা কোনো একক ব্যক্তি, সংগঠন বা সরকার একা করতে পারবে না। এজন্য সব রাজনৈতিক দল ও পক্ষের মধ্যে ঐক্য থাকতে হবে। যত প্রতিকূলতাই আসুক না কেন, ঐক্য ধরে রাখতে হবে।”
বিবৃতিতে তিনি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক ও ড. মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া এবং বিশেষ সহকারী মনির হায়দারকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান।
একই সঙ্গে তিনি গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন, যারা কমিশনের কার্যক্রম মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।
📚 পটভূমি
বাংলাদেশে একটি স্থায়ী ও জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থা গঠনের লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি “জাতীয় ঐকমত্য কমিশন” যাত্রা শুরু করে। কমিশনের মেয়াদ শেষ হয় শুক্রবার (৩১ অক্টোবর)।


0 Comments
Post a Comment