Umama Fatema 



Umama Fatema তার ভেরিফাই ফেসবুক পেইজে। 

গতকাল এমন একটি পোস্ট করেছে তা মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়।

পোস্টটা হুবুহু  তুলে ধরা হলো।


গত ১ মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে জ্বরের প্রকোপ শুরু হয়েছে। ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া টেস্ট নেগেটিভ আসে। কিন্তু প্রচন্ড জ্বর, দূর্বলতা, অরুচি তৈরি হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো প্রকার পাত্তা নেই। জ্বরের সময়ে ঢাবি ক্যাম্পাসের খাবার মুখে নেয়া যায় না। শরীর আরো দূর্বল হয়ে পড়ে। এই গরমে মহামারির মতো হলে হলে ছাত্ররা অসুস্থ হচ্ছে কিন্তু প্রশাসনের সামান্য তদারকি নেই। গতকাল সকালে এই বমি, দূর্বলতা নিয়ে ঢাবি মেডিকেলে গেলাম। অসুস্থতার থেকেও খারাপ লাগছিল এই ক্যাম্পাসে প্রতি পদে পদে বিমাতাসুলভ আচরণ, নিজেরি সন্তানদের কতটা অপর করে তুলতে পারে। 


স্ক্রিনশট 

স্ক্রিনশট


এরপর ঢাবি মেডিকেল থেকে এক অ্যাম্বুলেন্সে করে ইবনে সিনা হাসপাতালে নেয়া হয়। অ্যাম্বুলেন্সে একটা মাত্র ফ্যান, সেটা ড্রাইভারের জন্য। অ্যাম্বুলেন্সে পুরোটা সময় আরো হাঁসফাঁস লাগছিল। একটা মান্ধাত্ত্বার আমলের পরিত্যাক্ত যন্ত্রাংশকে অ্যাম্বুলেন্সের নামে চালিয়ে দেয়ার ধৃষ্টতা শুধু আমাদের প্রশাসনই করতে পারে। এই পরিস্থিতির মধ্যে শুনি বঙ্গমাতা হলের ছোটবোন লিজার মৃত্যুর সংবাদ। নিজের অসুস্থতার মধ্যে এই মৃত্যু প্রচন্ড অসহায়ত্ব তৈরি করেছিল। মুহূর্তের মধ্যে এই ক্যাম্পাসের সবকিছু ওলটপালট লাগে। 


রাতে আবার শরীর খারাপ হলে ঢাবি মেডিকেলে যাই। সেখানে দেখি বিজয়-৭১ হলের ছোটভাই তানিমকে নিয়ে আরেক ছোটভাই জিদান নিয়ে এসেছে। তানিমের একি পরিস্থিতি। জ্বর, কিছু খেতে পারছে না। তাকে স্টেবল করার জন্য স্যালাইন দেয়া হলো। ডাকসুর ডামাডোলের বাইরে মনে হচ্ছে ক্যাম্পাস এখন একটা মৃত্যুপুরী। হরেদরে শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হচ্ছে। এই ক্যাম্পাসে এমন ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছে, সুস্থ মানুষকেও শেষ করে ফেলে ভিতর থেকে। 


রাতে ছোটবোন লিজার কথাই মনে পড়ছিল বারবার। সে এতদিন ধরে দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত, তার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগ কি?! তাকে তো সন্তানের মতো আগলে রাখার কথা। তার জন্য সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেয়ার কথা। কিন্তু কোথায় কি! এই অথর্ব প্রশাসনিক ব্যবস্থা থেকে আমাদের মুক্তি দরকার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ছাত্রদের জন্য গড়ে তুলতে না পারলে এই ক্যাম্পাসের ভগ্নদশা দেখার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। 


এসব ভাবনার মধ্যে চোখে পড়ল Ummay Suhala-র পোস্ট। কালকে সারাদিন ঘুরতে থাকা চিন্তাগুলো তার কথায় উঠে এসেছে। 


এইতো কিছুদিন আগের কথা। রাত প্রায় ১টা বাজে। হুট করে প্রচন্ড রকমের অসুস্থ পড়েছিলাম।সেদিনই উপলব্ধি করেছিলাম এই জঘন্য ভয়াবহ বাস্তবতা!!


প্রচণ্ড পেট ব্যথায় আমার শরীর যখন অসার হয়ে যাচ্ছিল, ফ্রেন্ড আর রুমমেটরা আমাকে ধরে হল গেটে নিয়ে গেল। কোনো স্ট্রেচার ছিল না।আর নামেমাত্র একটা হুইলচেয়ার থাকলেও সেটারও খোঁজ মিলেনি ।১০০ বার কল দেওয়ার পর হাউস টিউটর ম্যামগণ ১ ঘন্টা পর আসলেও আমার লোকাল গার্ডিয়ান না থাকায় আমাকে নাকি হসপিটালে নিয়ে যাওয়া যাবেনা।এত রাতে লোকাল গার্ডিয়ান সাভার থেকে আসবে তারপর আমাকে হসপিটালে নিয়ে যাবে!!  মানে ভাবা যায়? তুমি মরে গেলে যাও গেট খুলা যাবেনা!! কতটা দায়িত্বহীন!!  তখন আমার বাবা- মা সবাই ইন্ডিয়া। পাশে একটা ফ্রেন্ড ( Tonni Mozumder) ছাড়া সেই রাতে কেউ ছিলনা!!


অবস্থা যখন ভয়াবহ, তখন আমাদের কলাভবনের ডিন  ও আমার ডিপার্টমেন্টের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মো: সিদ্দিকুর রহমান খান স্যার প্রভোস্ট ম্যামকে কল দিয়ে দেওয়ার পর হল গেট খুলে দেয়।এরপর আমাকে হলের বাহিরে নেওয়া হয়।


সেই রাতে ঢাকা মেডিকেল থেকে সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল আবার ঢাকা মেডিকেল।আমার অবস্থা খারাপ কারণ ইমিডিয়েট অপারেশন করা লাগবে। কোথাও কোনো ডাক্তার নেই। অবশেষে বারডেমে ভর্তি করা হয়।

২ ঘন্টা পর সেদিন আমার লোকাল গার্ডিয়ান আসে। প্রতিটি হলে সিক বয় / গার্ল থাকে নামেমাত্র, কোনো দায়িত্ব তারা পালন করেন না।


এর সমাধান কি? না আজও কোনো সমাধান পাওয়া যায়নি!!


আজকে বঙ্গমাতা হলের লিজা আপু মারা গেলেন।হয়তো তাঁর হায়াত আল্লাহ এই অবধি রেখেছিলেন কিন্তু হল প্রশাসন বা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কি কোনো গাফিলতি ছিলনা?? এ্যাম্বুলেন্স কেন সময়মতো আসলোনা??

হল প্রশাসন কেন জরুরি ব্যবস্থা নিলনা??



বিষয় ঃ আমার দেশ নিউজ